বাদল আহাম্মদ খান নিজস্ব প্রতিবেদক, আখাউড়া
রেললাইনের পাশে কেউ একজন লোহার গোল রিং নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। ট্রেনের চালক লোকোমোটিভে (ইঞ্জিনে) বসে থাকা অবস্থায় শরীরটা কিছুটা হেলিয়ে ওই রিং বিশেষ কায়দায় হাতে নেন। অনতিদূরেই চালক এটি আবার ফেলে রেখে যান
ট্রেনে যারা নিয়মিত ভ্রমণ করেন তাদের অনেকের কাছেই এটি পরিচিত দৃশ্য হতে পারে। চালক ঠিকমতো নিতে পারলেন কিনা এটি দেখার মানুষেরও অভাব হয় না রেলওয়ে স্টেশনগুলোতে। আবার দায়িত্বরত ব্যক্তি কোথায় এটিকে খোঁজে পেলেন সেটি দেখতেও অনেকে তাকিয়ে থাকেন
রেলওয়ের ভাষায় এ পদ্ধতিকে বলা হয় পেপার লাইন ক্লিয়ার (পিএলসি)। যেসব স্টেশনে সংকেত বাতির ব্যবস্থা নেই এর আগের স্টেশনগুলোতে এ ধরণের পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, ট্রেনের বিরতিহীন চলাচলে। রিংটিতে একটি কাগজ মুড়িয়ে দেওয়া হয়, যেটি চলাচালের ‘নির্দেশনা পত্র’ হিসেবে বিবেচিত হয়। নিয়ম অনুসারে ঝুঁকি এড়াতে রিংটি নেওয়ার সময় ট্রেনের গতি থাকতে হবে সর্বোচ্চ ১৬ থেকে ৪০ কিলোমিটার। গতি বেশি থাকলে রিংয়ের মাধ্যমে পিএলসি দেওয়া-নেওয়ার দায়িত্বরত দু’জনের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া বৃষ্টির দিন ও ঘন কুয়াশায় এ ধরণের পদ্ধতিটি আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা রেলপথে ‘বন্ধ থাকা’ ১২টি স্টেশনের জন্য এ পদ্ধতিতে বিরতীহীন ট্রেনগুলোকে লাইন ক্লিয়ার নিতে হয়। নিয়ম অনুসারে যে স্টেশনটি বন্ধ সেটির আগের স্টেশন থেকে পিএলসি নিতে হয়, যেখানে চলাচলের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া থাকে। এতে করে ট্রেন পরিচালন সময় (রানিং টাইম) বেড়ে যায়। শুধু ওই পদ্ধতির বদল করে সহজেই কমানো যেতে পারে ট্রেনের পরিচালন সময়। বাঁচানো যেতে পারে ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময়। এতে যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দবোধ করবে। বাড়বে রেলওয়ের সেবার মান
দেশের পূর্বাঞ্চলীয় রেলপথের ঢাকা-চট্টগ্রাম পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় ৩২০ কিলোমিটার। ওই পথটিতে মোট রেলওয়ে স্টেশনের সংখ্যা ৬৪টি। এ পথে বিরতীহীন আন্ত:নগর ট্রেনগুলো শুরু থেকে সর্বশেষ গন্তব্যে পৌঁছায় সোয়া পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ ঘন্টা সময়ে। এর মধ্যে ওই ১২টি স্টেশনের জন্য পেপার লাইন ক্লিয়ার নিতে অতিরিক্ত ২০ থেকে ২৫ মিনিট সময় লেগে যাচ্ছে। কখনো কখনো রিং নিতে না পারলে ট্রেন থামিয়ে নিতে গেলে আরো অতিরিক্ত সময় লাগে। ওই রিংটি ফেলে যাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে খোঁজে পেতেও বেশ বেগ পেতে হয়। বিশেষ করে রাতের বেলা এ সমস্যা হয় বেশি
কেননা, বিশেষ করে নিয়মিত ৬০-৭০ কিলোমিটার গতিতে চলতে থাকা বিরতীহীন ট্রেনগুলোকে ১৬ থেকে ৪০ কিলোমিটারে নামিয়ে এনে আবার আগের গতিতে নিতে গিয়ে সময় নষ্ট হয়। বিরতীহীনগুলো ছাড়াও ওইসব স্টেশনে যাত্রাবিরতি নেই এমন ট্রেনগুলোকেও একই পদ্ধতি ব্যবহার করতে হয়। আর যাত্রাবিরতি দেওয়া ট্রেনগুলোকে পিএলসি নিতে হলেও ওই রিং পদ্ধতি ব্যবহার করতে হয় না। স্টেশন মাস্টার হাতে লিখে লোক মারফত চালকের কাছে সেটা পৌঁছে দেন
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের বাড়বকুন্ড, বারৈয়াঢালা, মিরসরাই, মস্তাননগর, মুহুরীগঞ্জ, কালীদহ, শর্শদী. নাওটি, আলীশহর, ময়নামতি, আশুগঞ্জ ও শ্রীনিধি স্টেশনে এ পদ্ধতির ব্যবহার হয়। এসব স্টেশনের সংকেত বাতি নেই কিংবা কাজ করছে না। ওই স্টেশনগুলোর আগেরটিতে অর্থাৎ ২৪টি স্টেশনে পিএলসি পদ্ধতি ব্যবহার করতে হয়
তবে সংকেত বাতি কাজ করছে না এমন দু’টি স্টেশনে ক্লিপ লক করে চালানোয় পিএলসি পদ্ধতি ব্যবহার করতে হচ্ছে না। আমীরগঞ্জ ও ঘোড়াশাল স্টেশনে ক্লিপ লক করে চালানো হয়। অর্থাৎ ওই দুইটি স্টেশনের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী স্টেশনগুলোর সংকেত যোগাযোগের মাধ্যমে ট্রেন চলাচল করে
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সংকেত ব্যবহার হয় না এমন স্টেশনগুলোকে অন্য স্টেশনের ব্লক সেকশনের আওতায় এনে চালানো গেলে ট্রেন পরিচালন সময় কমে আসবে। এটি একটি সাময়িক পদ্ধতি হওয়ায় যেকোনো সময় লক খুলে সচল করে আগের জায়গায় ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব। স্টেশনগুলোতে সংকেত বাতি চালু হলে লক খুলে সহজেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যাবে
আশুগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন মাষ্টার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এখানে ট্রেন থামা বা চলার কোনো সংকেত বাতি নেই। যে কারণে বিরতিহীন ট্রেনগুলোকে তালশহর ও ভৈরব স্টেশন থেকে পিএলসি নিয়ে চলাচল করতে হয়। যেসব ট্রেন থামে সেগুলো নির্ধারিত সময় থেমে আবার যাত্রা শুরু করে।
আখাউড়া লোকো স্টাফ রানিং সমিতির সভাপতি ট্রেন চালক মো. কবির আহমেদ ভুইয়া বলেন, ‘পিএলসি নেওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ। আবার কখনো মিস হলে ট্রেন থামিয়ে নিতে হয়। ঢাকা-চট্টগ্রামের পাশাপাশি আখাউড়া-সিলেট পথেও কয়েকটি স্টেশনে পিএলসি নিতে হয়। এক্ষেত্রে আমীরগঞ্জ ও ঘোড়াশালের মতো অন্যান্য স্টেশনগুলো ব্লক সেকশনে রূপান্তরিত করলে ট্রেনের রানিং টাইমও কমবে।’
প্রকাশক : নাদিম হোসেন তালুকদার, প্রধান সম্পাদক: আলমগীর হোসেন তালুকদার, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মোহনা চৌধুরী পিয়া, উপদেষ্টা: মোস্তফা সরোয়ার, আইন উপদেষ্টা :অ্যাডভোকেট তোহা, নির্বাহীসম্পাদক: মোহাম্মদ হবে হাফেজ মাওলানা আব্দুর রহমান, ফোন নাম্বার : 𝟎𝟏𝟕𝟏𝟏𝟒𝟑𝟏𝟏𝟔𝟑, প্রধান কার্যালয় : ৩ নং চিড়িয়াখানা রোড, নিউ সি ব্লক, মিরপুর-১ ঢাকা ১২১৬
E-mail : dainikbbckhobor.com@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত