বাদল আহাম্মদ খান নিজস্ব প্রতিবেদক আখাউড়া
প্রকৃতিতে হেমন্ত। তবে শীতের আমেজ এরই মধ্যে অনুভব হচ্ছে। সেই শীতকে শুধু অনুভবে নয়, চোখে দেখার আয়োজন। প্রায় ১০০ শিশু। এলেন শিক্ষক, অভিভাবক। যোগ দিলেন ইউএনও। বাদ পড়েননি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারাও।
এমন আয়োজন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায়। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে দুপুর নাগাদ এ আয়োজনে ছিলো হাঁটা, ব্যায়াম, কৃষি কাজ দেখা, শিশির বিন্দু পর্যবেক্ষণ, নাচ, গান, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন আরো কত কি। বাদ পড়েনি শীতের পিঠার স্বাদ নেওয়া। শিশু পার্রকে ঘুরার স্বাদও নেয় শিশুরা।
পৌর এলাকার রাধানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আয়োজনে ভোর পাঁচটা থেকে শুরু হয় শিশুদের আনাগোনা। পায়ে হেঁটে তারা প্রায় দুই কিলোমিটার দূরের খালাজোড়া গ্রামে ছুটে যায়। সেখানে খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে শিশুরা সূর্যোদয় দেখে। পবিত্র গ্রন্থ থেকে পাঠ ও পরে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় মূল আয়োজন। দৌড়বিদ নান্টু বনিক শারিরিক কসরত দিয়ে শুরু করেন। এরপর নববন্ধন খেলাঘর আসরের প্রান্তিকা সাহা, হুমায়রা লাবিবা খুশবু, রুদ্রজিৎ পাল ছড়ার মাধ্যমে বিশেষ শারিরিক কসরত করান। সকাল সাড়ে ছয়টার এ আয়োজনের শুরু থেকেই উপস্থিত হন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক গাজালা পারভীন রুহি। ওই কর্মকর্তাসহ শিশুরা আরো এক কিলোমিটার দূরে গিয়ে কৃষি কাজে দেখেন। ধানি জমির ধানের ছড়ায় লেগে থাকা শিশিরে হাত দিয়ে শিশুরা যেন ভিন্ন অনুভুতির স্বাদ পায়। এ আয়োজনে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. হিমেল খান, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ ইলিয়াস উদ্দিন, সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা মো. লুৎফুর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন পিটিএ সভাপতি বিশ্বজিৎ পাল বাবু।
আয়োজনের সংবাদ কাভার করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ছুটে আসা সময় টিভির ব্যুরো চিফ উজ্জল চক্রবর্তী বলেন, ‘নিসেন্দেহে এটা ব্যতিক্রম আয়োজন। শিশুদেরকে শীতের অনুভুতিকে পুরোপুরি উপভোগ করানোর এমন আয়োজন আমি আগে কখনো দেখিনি।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মৌসুমী আক্তার বলেন, ‘সাধারণত শিশুরা শীতের দিনে একটু দেরিতেই ঘুম থেকে উঠে। শীত অনুভব করলেও কুয়াশাসহ বাইরের দৃশ্য আসলে সেভাবে দেখে না। শিশুরা আয়োজনটিকে বেশ উপভোগ করেছে।
বিদ্যালয়ের প্যারেন্টস টিচার অ্যাসোসিয়েশনের (পিটিএ) সভাপতি বিশ্বজিৎ পাল বাবু বলেন, ‘আমাদের একটি সভাতে এ নিয়ে প্রস্তাব করার পর সবাই এক বাক্যে রাজি হন। অনুষ্ঠানটি শিশুরা বেশ উপভোগ করায় আমরা সফল হয়েছি বলেই মনে হচ্ছে। ভবিষ্যতেও শিশুদের জন্য শিক্ষামূলক ব্যতিক্রম কিছু করার চিন্তা আছে।’
ইউএনও গাজালা পারভীন রুহি বলেন, ‘প্রকৃতি আমাদের সবচেয়ে বড় শিক্ষা। আমরা যদি না জানি আমাদের সকাল কেমন, বিকেলে কেমন তাহলে আমাদের অপিরপূর্ণতা থেকে যায়। সকালে কৃষক কিভাবে কাজ করে, কিভাবে বীজতলা তৈরি করে সেগুলো শিশুরা এখনই শিখলে তাদের বেশ কাজে আসবে। শুধু প্রথাগত শিক্ষা নয় এর বাইরের শিক্ষাগুলো তাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’ এ আয়োজনটি বেশ চমৎকার ও ব্যতিক্রম বলে তিনি মন্তব্য করেন।