ইয়াছিন আরাফাত, চান্দিনা কুমিল্লাপ্রতিনিধি
কুমিল্লার চান্দিনায় উপজেলা প্রশাসন এর অভিযানে দুই অবৈধ মাটি কাটার ভেকুর ব্যাটারি, যন্ত্রাংশ জব্দ এবং দুই মাটি বিক্রেতা কে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা। সোমবার (০৩ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চান্দিনা উপজেলা প্রশাসন এর অভিযানে মাইজখার ইউনিয়ন এর মাইজখার গ্রামের আব্দুল গনির ছেলে মাটি বিক্রেতা আবুল কালাম আজাদ ও শরাফত আলী মৈশান এর ছেলে মাটি বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম মৈশান কে অবৈধ ভাবে ভেকু দিয়ে ফসলি জমি কেটে মাটি বিক্রি করার অপরাধে ৫০ হাজার টাকা করে দুইটি মামলায় ১ লক্ষ টাকা জরিমানা ও ২ টি ভেকুর ব্যাটারি, যন্ত্রাংশ জব্দ করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজিয়া হোসেন,সহযোগীতায় ছিলেন আনসার সদস্যরা
এ বিষয় এলাকাবাসী জানায়, মাইজখার গ্রামে দীর্ঘদিন যাবত আশেপাশের জমি নষ্ট করে অবৈধ ভাবে মাটি বিক্রি করে আসছে তাদেরকে এলাকার লোকজন বাঁধা দিলেও তারা কারো কথায় কর্ণপাত করে নি।তারা অবৈধ ভাবে অন্যের জমি নষ্ট করে মাটি বিক্রি চালিয়ে যাচ্ছে।পরে উপজেলা প্রশাসন কে অবগত করলে তাদেরকে দুজনকে ৫০ টাকা করে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করে। জানা যায় চান্দিনা উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের বিভিন্ন ফসলী মাঠে দেদারসে চলছে অবৈধ মাটি কাটার ভেকু ও ড্রেজার।কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রশাসনিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে ইট ভাটায় নিয়ে যাচ্ছে ও বালু উত্তোলন করে বিভিন্ন পুকুর ভরাট এর মাধ্যমে কৃষি জমি বিলীন করে যাচ্ছে। যে জমিতে ড্রেজিং করা হয়, তার আশে-পাশের কৃষি আবাদি জমিও ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কিন্তু অসাধু এসব ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থেকে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের কারণে সাধারণ কৃষকরা তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়,এ উপজেলায় বর্তমানে ১৩ হাজার ১০০ হেক্টর কৃষি জমি রয়েছে। প্রতি বছর ১ শতাংশ কৃষি জমি অবৈধ ড্রেজিং সহ বিভিন্ন কারণে কমে যাচ্ছে। এতে খাদ্য-শস্য ও ফসল উৎপাদনও আনুপাতিক হারে কমছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কৃষক অভিযোগ করেন,চান্দিনায় ভেকু ও ড্রেজার এর কারণে দিন দিন ফসলি জমি কমে যাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন যদি এগুলো সঠিক সময় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয় এক সময় কৃষি জমি হ্রাস পাবে।তারা আরো বলেন‘আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভেকু ও ড্রেজার ব্যবসায়ীরা বর্তমান ক্ষমতায় না আসা নব্য নেতাকর্মীদের সাথে আঁতাত করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। অবৈধ ভেকু দিয়ে বিভিন্ন বিক্সে মাটি বিক্রি করছে ও ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলনের মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীরা। উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ভয়ে কথা বলতে পারছেনা ভুক্তভোগী সহ স্থানীয় কৃষকরা।’ জানা গেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের আগে তৎকালীন উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিভিন্ন সময়ে অবৈধ মাটি-বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে অবৈধ ভেকু ও ড্রেজার মেশিন ভেঙে দেওয়াসহ জড়িতদের অর্থদণ্ডের পাশাপাশি কারাদণ্ড ও প্রদান করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। উপজেলা প্রশাসনের কঠোর অভিযান অব্যাহত থাকায় অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ছিল অবৈধ ড্রেজিং। এব্যাপারে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাজেদুল ইসলাম জানান, চান্দিনায় ১৩ হাজার ১০০ হেক্টর কৃষি জমি রয়েছে। আগামী বছর ১শত ৩১ হেক্টর কৃষি জমি হ্রাস পাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। অবৈধ ভাবে ভেকু দিয়ে মাটি বিক্সে বিক্রি ও ড্রেজার এর মাধ্যমে মাটি উত্তোলন, মৎস্য প্রকল্প তৈরী, বাড়ি-ঘর ও রাস্তা নির্মাণের কারণে কৃষি জমি কমে যাচ্ছে। এব্যাপারে চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাজিয়া হোসেন জানায় ‘আমি ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে সোমবার
(০৩ ফেব্রুয়ারি)দুপুরে মাইজখার ইউনিয়ন এর মাইজখার গ্রামের দুই মাটি বিক্রেতা কে অবৈধ বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ অনুযায়ী কৃষি জমির মাটি ভেকু দিয়ে কাটার অপরাধে ৫০ হাজার করে দুইটি মামলায় ১ লক্ষ টাকা জরিমানা ও ভেকু মেশিনের ব্যাটারি, যন্ত্রাংশ জব্দ করেছি।অভিযোগ পেলেই আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান করে এসব ভেকু,ড্রেজার ধ্বংস করা সহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।অবৈধ ড্রেজিং এর অভিযান আমাদের অব্যাহত থাকবে।